দলের হয়ে ট্রফি জেতাই একজন ফুটবলারের সর্বোচ্চ সাফল্য ও সবচেয়ে বড় তৃপ্তি। তবে কাজটা মোটেও সহজ নয়। ফুটবল ইতিহাসে এমন অনেক কিংবদন্তি আছেন, যাঁরা মাঠে দুর্দান্ত ছিলেন; কিন্তু খুব বেশি শিরোপা জিততে পারেননি। আবার এমন কজন ফুটবলার আছেন, যাঁরা বড় মঞ্চে বারবার সফল হয়েছেন। শিরোপার স্বাদ পাওয়া যেন অভ্যাস বানিয়ে ফেলেছিলেন তাঁরা। তাঁদের ট্রফির তালিকা যত লম্বা, বিশ্ব ফুটবলে প্রভাবও তত গভীর। কে কতবার শিরোপার মঞ্চে উঠেছেন, ট্রফি উঁচিয়ে উল্লাস করছেন, তা জানতে নজর দেওয়া যাক সংখ্যার দিকে। চলুন দেখে নেওয়া যাক ফুটবল ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ট্রফি জিতেছেন কোন ১০ ফুটবলার।
ট্রফি জয়ের শীর্ষে কে, তা অনেকেরই জানা। তর্ক সাপেক্ষে সর্বকালের সেরা এই ফুটবলার বেশির ভাগ শিরোপাই জিতেছেন বার্সেলোনার হয়ে। আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের হয়ে ক্যারিয়ারের শুরু ও মাঝের দিকে ট্রফিশূন্য থাকলেও সর্বশেষ চার বছরে জিতেছেন চারটি। এর মধ্যে ২০২২ কাতার বিশ্বকাপ তাঁর বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারকে পরিপূর্ণ করে তুলেছে। বর্তমান ক্লাব ইন্টার মায়ামির হয়ে সর্বশেষ গত বছর এমএলএস সাপোর্টার্স শিল্ড জিতেছেন মেসি। এখন তাঁর ট্রফির সংখ্যা রেকর্ড ৪৬টি।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৩ ট্রফি জিতেছেন দানি আলভেজ। বার্সেলোনা, সেভিয়া, জুভেন্টাস, পিএসজির সাবেক এই তারকার শিরোপা সংখ্যা হয়তো আরও বাড়ত। কিন্তু ধর্ষণের দায়ে ২০২৩ সালে গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাঁর ক্যারিয়ার আর এগোয়নি। গত বছর তিনি জামিনে মুক্ত হলেও ফুটবল থেকে অনেক দূরে আছেন।
মিসরীয় ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সফল খেলোয়াড় হোসাম আশুর। স্বদেশি ক্লাব আল আহলির হয়ে ২০০৩ সালে অভিষেক হয় তাঁর। এরপর ১৭ বছরে ক্লাবটির হয়ে জেতেন রেকর্ড ৩৯টি ট্রফি। ২০২০ সালে আল ইত্তিহাদে যোগ দেন আশুর। তবে এই ক্লাবের হয়ে কিছুই জিততে পারেননি। ২০২২ সালে তিনি অবসরে যান।
মিসরের সফলতম স্ট্রাইকার হোসাম হাসান। দেশের হয়ে করেছেন সর্বোচ্চ ৬৮ গোল। বর্তমানে তিনি মিসর জাতীয় দলে মোহাম্মদ সালাহ–ওমর মারমুশদের প্রধান কোচ। খেলোয়াড়ি জীবনে তিনি জিতেছেন ৪১ শিরোপা, যা তাঁকে এই তালিকার তিনে রেখেছে।
বার্সেলোনার আরেক কিংবদন্তি সের্হিও বুসকেতস আবারও লিওনেল মেসির সতীর্থ হিসেবে খেলছেন ইন্টার মায়ামিতে। তাঁর ট্রফির সংখ্যাও বাড়ছে বয়সে সমান্তরালে। গত জুলাইয়ে ৩৮–এ পা রাখা এই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার এখন পর্যন্ত জিতেছেন ৩৮টি ট্রফি।
মিডফিল্ড ম্যাজিশিয়ান’ বলা হতো তাঁকে। বার্সেলোনার এই কিংবদন্তি সব মিলিয়ে জিতেছেন ৩৮ শিরোপা। বার্সা ছাড়ার পর জাপানি ক্লাবে ভিসেল কোবেতেও ছিলেন সফল। স্পেনের ইউরো–বিশ্বকাপ–ইউরোজয়ী দলের সদস্য ছিলেন। তাঁর এতগুলো ট্রফির মধ্যে কোনটি ফুটবলপ্রেমীদের কাছে সবচেয়ে স্মরণীয়, সেটি বুঝতেই পারছেন। ২০১০ বিশ্বকাপ ফাইনালের অতিরিক্ত সময়ে তাঁর গোলেই তো বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল স্পেন।
বয়সেই স্বদেশি ক্লাব ক্রুজেইরো ছেড়ে ইউরোপে পাড়ি জমান। খেলেন আয়াক্স, ইন্টার মিলান, বার্সেলোনা, পিএসজির মতো ক্লাবে। ২০১৭ সালে খেলোয়াড়ি জীবনকে বিদায় বলার আগে জেতেন ৩৭ ট্রফি।
তালিকার সাতে আছেন ম্যাক্সওয়েল। ব্রাজিলের সাবেক এই ফুটবলার নিজেকে কিংবদন্তিদের কাতারে নিয়ে যেতে না পারলেও ট্রফি জিততেন নিয়মিতই। তরুণ
সর্বকালের সেরা ডিফেন্ডারদের একজন বিবেচনা করা হয় তাঁকে। তাঁর ট্রফি ক্যাবিনেটও ভরপুর। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে চারটি শিরোপাজয়ী এই তারকা পরে বার্সেলোনার হয়ে সম্ভাব্য সবকিছুই জিতেছেন। স্পেন জাতীয় দলের হয়ে জিতেছেন ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ ও বিশ্বকাপ শিরোপাও।
সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার তিনি। স্পোর্তিং লিসবন, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, রিয়াল মাদ্রিদ, জুভেন্টাস, আল নাসর—ক্লাব ফুটবলে যেখানেই খেলেছেন, সেখানেই জিতেছেন শিরোপা। জাতীয় দল পর্তুগালের হয়েও আছে তিনটি ট্রফি। সব মিলিয়ে তাঁর ট্রফির সংখ্যা ৩৬, যা তাঁকে এই তালিকায় ৯ নম্বরে রেখে। তবে একটা আক্ষেপ রয়েই গেছে। বিশ্বকাপটা জেতা হয়নি।
শীর্ষ স্তরের ফুটবল ক্যারিয়ার এক ক্লাবেই কাটিয়ে দিয়েছেন। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের এই কিংবদন্তি জিতেছেন ৩৫ ট্রফি। এর মধ্যে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ জিতেছেন রেকর্ড ১৩ বার। স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের দলের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য এই উইঙ্গার ক্লাবটির হয়ে দুই যুগে হাজারের বেশি ম্যাচ খেলেছেন।
Leave a Reply