১ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে আরও কার্যকরভাবে এবং পূর্ণরূপে নিশ্চিত করতে ‘সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ ২০২৫’ জারি করা হয়েছে। এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে অধস্তন আদালতের তত্ত্বাবধান, নিয়ন্ত্রণ, ও শৃঙ্খলাবিধানের কাজ সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য একটি স্বতন্ত্র সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের মুদ্রণ ও প্রকাশনা শাখা থেকে গতকাল অধ্যাদেশটি (অধ্যাদেশ নং ৭২, ২০২৫) প্রকাশ করা হয়।
নির্ভুল আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে NBR তালিকাভুক্ত
কর আইনজীবীর পরামর্শ নিন। মানিক দাস, কর আইনজীবী
অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, সংবিধানের ২২ নম্বর অনুচ্ছেদে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে নির্বাহী বিভাগকে বিচার বিভাগ থেকে পৃথক রাখা রাষ্ট্র পরিচালনার একটি মূলনীতি।
কি এবং কেন:
- ৩০ নভেম্বর, ২০২৫ তারিখে রাষ্ট্রপতির নির্দেশে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে “সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ, ২০২৫” গেজেট হিসেবে জারি করা হয়েছে। এর ঘোষণা রাষ্ট্রের বিচার বিভাগের “পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা” নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে। বিচার বিভাগকে নির্বাহী (সরকারি) বিভাগ থেকে পুরোপুরি আলাদা করা হচ্ছে।
- এই অধ্যাদেশ নিশ্চিত করছে যে, এখন থেকে অধস্তন আদালত, প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালসহ বিচার বিভাগের প্রশাসনিক ও নিয়োগ-ব্যবস্থাপনায় পুরো নিয়ন্ত্রণ থাকবে Supreme Court of Bangladesh-এর নিজস্ব সচিবালয়ের হাতে।
অধ্যাদেশে কি কি সুবিধা / পরিবর্তন আনা হয়েছে:
- নতুন সচিবালয় গঠন: অধ্যাদেশ অনুসারে একটি “সচিব” ও অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে একটি স্বতন্ত্র “সচিবালয়” তৈরি হবে। নিয়োগ, নিয়ন্ত্রণ ও আদালতের প্রশাসনিক কর্তৃত্ব: এই সচিবালয়ই অধস্তন আদালতগুলোর সংখ্যা, কাঠামো, দায়িত্ব (jurisdiction), বিচারক নিয়োগ, ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান/সদস্য নিয়োগ এবং তাদের চাকরিসংক্রান্ত শর্ত সব কিছুর জন্য দায়ী হবে।
- নিয়োগ-রদ্বিরোধ, পদ সৃষ্টি বা বিলোপ, পোস্টিং-ট্রান্সফার, শৃঙ্খলা, ছুটি, অন্যান্য প্রশাসনিক কার্যাবলী: এরকম সব প্রশাসনিক দায়-বায় বিস্তৃত হবে। বিচার বিভাগের প্রশাসনিক ও কার্যকর “স্বাধীন-পরিচালনা”: আইন মন্ত্রণালয় বা অন্য কোনো নির্বাহী দফতর আর নিচু আদালতের প্রশাসনিক কাজ করবে না অর্থাৎ “দ্বৈত শাসন (dual rule)” শেষ হবে।
গুরুত্ব কেন এটি বিশেষ:
- “দ্বৈত শাসন” বন্ধ করে বিচার বিভাগের “স্বাধীনতা” প্রতিষ্ঠা: বহু বছর ধরে শুধু বিচার বিভাগই নয়, প্রশাসনিক (মন্ত্রনালয়) নিয়ন্ত্রণের কারণে বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় সীমাবদ্ধতা ছিল। এই অধ্যাদেশ সেই কাঠামোর পরিবর্তন আনছে। ন্যায্য বিচার, আদালতের স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা: বিচারক নিয়োগ, ট্রাইব্যুনাল ও অধস্তন আদালত পরিচালনায় সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকলে রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ কমবে যা বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও জনগণের আস্থাকে দৃঢ় করবে।
- প্রশাসনিক অঙ্গ-ব্যবস্থাপনায় সুসংগঠন: নিয়োগ, পোস্টিং, বিচারক ভারসাম্য, আদালতের সংখ্যা ও ক্ষমতার সুষ্ঠু বিন্যাস সব কিছু সুসম্পন্ন করতে পারবে।
কিছু প্রক্রিয়া এবং শর্ত:
অধ্যাদেশ কার্যকর হবে যখন সচিবালয় গঠন এবং নিয়োগ-ব্যবস্থা বাস্তবায়ন শেষ হবে। একটি “পদ সৃজন কমিটি” গঠন করা হবে নতুন পদ তৈরি বা বিলোপ, আদালতের কাঠামো নির্ধারণ, নিয়োগ-বদল, নিয়োগ-শর্ত ইত্যাদি বিষয় এ কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী করা হবে।
- কমিটির রূপ: এতে কমিটির সভাপতি হবেন আপিল বিভাগের একজন জ্যেষ্ঠ বিচারক; অন্যান্য সদস্য হিসেবে থাকবেন হাই কোর্ট বিভাগের বিচারক, আইন ও বিচার বিভাগের সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, এবং রেজিস্ট্রার জেনারেল।
সার্বিক মূল্যায়ন:
“সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ, ২০২৫” বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার জন্য একটি ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি যদি ঠিকমতো এবং নিরপেক্ষভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, তাহলে বিচার বিভাগের প্রশাসনিক ও কার্যনির্বাহী স্বাধীনতা নিশ্চিত হবে; ট্রাইব্যুনাল ও আদালতের কাজ পরিচালনায় সরকারের দমন-নির্বাপত্তা বা অন্য কোনো চাপে পড়ার সম্ভাবনা কমে যাবে। ফলে সাধারণ মানুষের অধিকার-নিষ্ঠা বিচার, আইনশাসন, প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা ও জনগণের আইন-আস্থা বৃদ্ধি পাবে।
নির্ভুল আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে NBR তালিকাভুক্ত
কর আইনজীবীর পরামর্শ নিন। মানিক দাস, কর আইনজীবী
Leave a Reply