জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR) এবং অভ্যন্তরীন সম্পদ বিভাগ-সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের “রাজস্ব বাড়াতে কর ফাঁকি বন্ধে মনিটরিংয়ের নির্দেশ”-এর মূল বিষয়বস্তু ও প্রয়োগ-পদ্ধতি বিস্তারিতভাবে:
নির্দেশনার মূল বিষয়বস্তু
নির্ভুল আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে NBR তালিকাভুক্ত
কর আইনজীবীর পরামর্শ নিন। মানিক দাস, কর আইনজীবী
১. কর ফাঁকি রোধের জন্য মাঠ-পর্যায়ে গোয়েন্দা ও তদন্ত কার্যক্রম জোরদার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
২. প্রতিটি কর অঞ্চলকে নিজস্ব ইন্টেলিজেন্স & ইনভেস্টিগেশন সেল (I & I Cell) গঠন ও কার্যকর করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
3. করদাতার আয়, সম্পদ, রিটার্ন ও পরিশোধিত করের মধ্যে অস্বাভাবিকতা খুঁজে বের করার জন্য-
- আয়কর নথিতে ঘষা-মাজা বা কাটাছেঁড়া হলে;
- করযোগ্য আয় কম দেখিয়ে দেওয়া বা ক্রমাগত করমুক্ত আয় দেখানোর ক্ষেত্রে;
- আয় ও সম্পদের তুলনায় অতিরিক্ত নিট সম্পদ প্রদর্শিত হলে- তদন্ত শুরু করতে বলা হয়েছে।
- গোয়েন্দা ও তদন্ত তথ্য-উপাত্ত পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট টিম পর্যায়ের অনুমোদনের পর রাজস্ব পুনরুদ্ধার কার্যক্রম (আদায় বৃদ্ধির পদক্ষেপ) দ্রুত কার্যকর করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
- রিপোর্টিং ও মনিটরিং সুনিশ্চিত করতে-
- প্রতি মাসের নির্দিষ্ট তারিখে (উদাহরণস্বরূপ মাসের ১০ তারিখে) সংশ্লিষ্ট কর কমিশনারেট থেকে রাজস্ব ফাঁকি উদ্ঘাটন ও আদায় তথ্য NBR-এ পাঠানোর নিয়ম দেওয়া হয়েছে।
- একাধিক কমিশনার ও মনিটরিং সদস্যদের সঙ্গে সাপ্তাহিক বা মাসিক সভায় তথ্য উপস্থাপনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
- ডিজিটালায়ন ও তথ্যভিত্তিক পদ্ধতির ওপর জোর দেওয়া হয়েছে-
- সরকারি ও বেসরকারি তথ্যভাণ্ডার সংযুক্ত করে করদাতাদের আয়, লেনদেন ও সম্পদের তথ্য যাচাইয়ের চেষ্টা চলছে। কাগজভিত্তিক বেশি, এখন তথ্য-ভিত্তিক মনিটরিং ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
- কর প্রশাসনে প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে- যেমন- কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ, চুক্তি-নিগোসিয়েশন দক্ষতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব।
প্রয়োগ–প্রক্রিয়া ও মনিটরিং পয়েন্টসমূহ:
- প্রথম ধাপে, প্রতিটি কর অঞ্চল/কমিশনারেটকে তাদের সীমানায় সম্ভাব্য করদাতাদের শনাক্ত করতে বলা হয়েছে- যারা করদাতার “নেট” হতে পারে কিন্তু এখনও রিটার্ন দিচ্ছে না বা কর কম দিচ্ছে। দ্বিতীয় ধাপে, ওই শনাক্তকৃত করদাতা বা প্রতিষ্ঠানগুলোর- বিনা রিটার্ন অথবা কম রিটার্ন দান, আয়-সম্পদের অমিল, এ ধরনের তথ্য একত্র করা হবে।
- তৃতীয় ধাপে, গোয়েন্দা/তদন্ত সেল বিষয়-ভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণ করবে- এরপর যদি পর্যাপ্ত প্রমাণ হয় তাহলে “রাজস্ব পুনরুদ্ধার” পার্থক্য নির্ধারণ ও আদায়ের জন্য উদ্যোগ নেবে।
- চতুর্থ ধাপে, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জন্য মনিটরিং ফ্রেমওয়ার্ক লাগু হয়েছে- যেমন- প্রতি মাসে কত পরিমাণ কর ফাঁকি উদ্ঘাটন হয়েছে, কত পরিমাণ রাজস্ব আদায় হয়েছে, কত সময় নেয়া হয়েছে আদায় করতে ইত্যাদি।
- পঞ্চম ধাপে, ডিজিটাল তথ্যভিত্তিক নিয়ম চালু হয়েছে- যেমন আয়কর রিটার্ন, সম্পদ বিবরণী, আমদানি-রফতানি তথ্য, ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রকাশিত তথ্য- সবার সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হবে। রূপায়ণ চলছে।
নির্দেশনার উদ্দেশ্য ও প্রতিফলন:
- কর ফাঁকি রোধ করে রাজস্ব আয় বাড়ানোর উদ্দেশ্য রয়েছে- যেমন “অনেকে করদাতা হিসেবে শনাক্ত থাকলেও রিটার্ন দিচ্ছে না বা কম দিচ্ছে” বলে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে, রাজস্ব ঘাটতি কমাতে এবং নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণে মনোযোগ দেওয়া হয়েছে।
- নিয়মিত মনিটরিং ও তথ্য-ভিত্তিক নজরদারি বাড়ানো হলে করদাতাদের মধ্যে স্বেচ্ছায় কর প্রদান ও অপরাধমুক্ত পরিবেশ গড়ে উঠার সম্ভাবনা রয়েছে।
কিছু চ্যালেঞ্জ ও পরামর্শ:
যদিও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, বাস্তবে অনেক ক্ষেত্রে আদায় ও উদ্ঘাটনের পার্থক্য বেশ গভীর। উদাহরণস্বরূপ, ৯ মাসে কর ফাঁকি উদ্ঘাটনের পর মাত্র একটি অংশ আদায় হয়েছে।
তথ্যভিত্তিক মনিটরিং আরও শক্তিশালী করতে হবে- বাংলাদেশে অনেক ক্ষেত্রেই আয়-সম্পদের তথ্য সঠিক নয় বা লুকানো হয়।
- করদাতার সেবার দিকেও নজর দেওয়া জরুরি- যেমন রিটার্ন দান সহজ করা, তথ্যপ্রবাহ খোলা রাখা, যাতে “কর দেওয়া” গুরুত্বে পরিণত হয় না কেবল বাধ্যবাধকতা। প্রশাসনিক দুর্বলতা, দুর্নীতি ও মনিটরিং-সাপেক্ষ সমস্যা রয়েছে- যেমন কর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অনিয়মের কারণে বরখাস্তের ঘটনা দেখা গেছে।
নির্ভুল আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে NBR তালিকাভুক্ত
কর আইনজীবীর পরামর্শ নিন। মানিক দাস, কর আইনজীবী
Leave a Reply