কাউকে অনুচিতভাবে ট্যাক্স ছাড় দেওয়া বা অন্যায়ভাবে ট্যাক্স চাপানো যাবে না এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হল
কেন ট্যাক্স ন্যায্য হতে হবে:
নির্ভুল আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে NBR তালিকাভুক্ত
কর আইনজীবীর পরামর্শ নিন। মানিক দাস, কর আইনজীবী
- আইনগত সমতা (Equality before law): সকলের উপর একই ধরনের আইনের প্রযোজ্যতা থাকা উচিত। করব্যবস্থা যদি উন্মুক্তভাবে এবং অকারণ ভেদাভেদ করে তাহলে এটি সমতার নীতির বিরুদ্ধে যায়।
- ন্যায্যতা ও সমবণ্টন (Horizontal & Vertical equity): একই অবস্থা বা আয়ের লোকদের একইরকম কর দিতে হবে (horizontal equity), আর বিভিন্ন আয়ের স্তরের ওপর উপযুক্তভাবে বোঝা রাখা উচিত (vertical equity)।
- স্বচ্ছতা ও পূর্বানুমানযোগ্যতা (Transparency & Predictability): করদাতাদের জানা থাকা দরকার কোনগুলো করযোগ্য, করের হার কী এবং ছাড়/ছাড়ের মানদণ্ড কী যাতে তারা পরিকল্পনা করতে পারে।
- শাসনবিধি ও সম্মান (Rule of law & due process): কর আরোপ বা ছাড় দুটোই সরকারের কার্যক্রম; এগুলোকে আইনি বিধি ও প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হবে, ব্যক্তিগত ইচ্ছে নয়।
অবৈধ/অনিচ্ছাকৃত কর ছাড় বা আরোপ কিভাবে ঘটে):
- রাজনৈতিক/আর্থিক লেনদেন: বিশেষ কেউ সুবিধা পেতে সরকারীভাবে ছাড় দেওয়া।
- প্রশাসনিক ভুল বা অপচয়: ভুল ম্যাটার, ভুল শ্রেণীকরণ, বা দুর্বল নীতি প্রয়োগ।
- কঠোর রুল নেই/নিয়মভঙ্গ: আইন স্পষ্ট না হলে অফিসারদের স্বচ্ছন্দ ব্যবহারে বিরূপ সিদ্ধান্ত।
- দস্তাবেজ জালিয়াতি বা গোপন সুবিধা: করদাতাদের পক্ষ থেকে অসত্য তথ্য বা কর্মকর্তাদের দুর্নীতি।
আইনি ও প্রশাসনিক রক্ষা:
- আইনী ভিত্তি: করমুক্তি বা ছাড় কেবলমাত্র সংসদ/আইন দ্বারা বা নির্দিষ্ট প্রশাসনিক বিধিবলে হতে পারে স্ট্যান্ডার্ড সেট করা থাকা উচিত।
- স্বচ্ছ নীতিমালা ও মাপকাঠি: করছাড় প্রদানের স্পষ্ট শর্ত, সময়সীমা (sunset clause), এবং প্রভাব বিশ্লেষণ (fiscal impact) করতে হবে।
- অডিট ও হিসাব-নিরীক্ষা: স্বাধীন অডিট, জাতীয় হিসাবপত্র বা অডিট অফিস (যেমন জাতীয় অডিট অফিস) এর মাধ্যমে যাচাই।
- তদন্তকারী সংস্থা/অ্যান্টি-করাপশন বডি: দুর্নীতির অভিযোগ দ্রুত তদন্ত করা।
- জনসাধারণে ঘোষণাপত্র: যে সকল ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান কে করছাড় পেয়েছে তা প্রকাশ করা স্বচ্ছতার জন্য।
- আপীল ও বিচারব্যবস্থা: কর আরোপ বা ছাড় সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আবেদন/কোর্টে মামলা করার সুবিধা।
আন্তর্জাতিক মানদণ্ড:
- OECD/IMF প্রিন্সিপলস: করনীতিতে সমতা, দক্ষতা, স্বচ্ছতা, প্রশাসনিক সহজলভ্যতা এই সবই মূল।
- ব্যাপক দৃষ্টান্ত: উন্নত অর্থনীতিতে করছাড়ের নীতিগুলো প্রভাব বিশ্লেষণ (cost–benefit) করে, এবং নিয়মিত রিভিউ বা মেয়াদবন্ধ করা হয়।
কী করে “কাউকে করছাড় দেয়া যাবে না”:
আইনগত সীমান্ত নির্দিষ্ট করা করছাড় কেবল আইন/বিলের মাধ্যমে এবং স্পষ্ট মেয়াদসহ।
- পাবলিক রেজিস্ট্রি করছাড় প্রাপক ও পরিমাণ পাবলিক করা বাধ্যতামূলক।
- স্বতন্ত্র প্রিভিউ ও ইমপ্যাক্ট স্টাডি বড় ছাড়ের আগে জনগণের অর্থ ও বাজেটে তার প্রভাব মূল্যায়ন।
- মেয়াদোত্তীর্ণ ছাড় স্থায়ী নয়; নিয়মিত পুনর্মূল্যায়ন বাধ্যতামূলক।
- কঠোর অডিট ও রিপোর্টিং যেকোনো ছাড়ের পর অডিট রিপোর্ট প্রকাশ।
- দূর্নীতি নিয়ন্ত্রণ ডিসক্লোজার, কনফ্লিক্ট-অফ-ইন্টারেস্ট বিধান, কর্মকর্তা বদল ইত্যাদি।
নাগরিক হিসেবে আপনি কী করতে পারেন:
প্রশাসনিক অভিযোগ: কর কর্তৃপক্ষ/রেভিনিউ অফিসে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করুন।
- তথ্য জানার অধিকার (RTI/ভিন্ন নাম হতে পারে): কোন প্রতিষ্ঠান/ব্যক্তিকে কতটা ছাড় দেওয়া হয়েছে তা চেয়ে নিন।
- সাংবাদিকতা ও প্রকাশ্যতা: বিষয়টি স্থানীয় বা জাতীয় মিডিয়ায় নেওয়া যেতে পারে (প্রমাণসহ)।
- আইনি উপায়: অনুচিত কর আরোপ বা অবৈধ ছাড়ের বিরুদ্ধে রায়প্রাপ্তির জন্য হাইকোর্ট/শ্রেণীভিত্তিক আপিল করা। (আইনজীবীর পরামর্শ প্রয়োজন)।
- অন্তর্বর্তী রাজনৈতিক/নাগরিক চাপ: নাগরিক সংগঠন, এনজিও বা পলিটিক্যাল অ্যাক্সন গ্রুপের মাধ্যমে প্রশাসনিক জবাবদিহিতা দাবি করা।
- অ্যান্টি-করাপশন কমিশন/অফিসে রিপোর্ট: যদি দুর্নীতির ধারণা থাকে।
নির্ভুল আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে NBR তালিকাভুক্ত
কর আইনজীবীর পরামর্শ নিন। মানিক দাস, কর আইনজীবী
Leave a Reply