বাংলাদেশের সিনিয়র সচিবের উদ্ধৃতিতে বলা হয়েছে, “দেশে মোট মামলার ৮০ শতাংশই ভূমি সংক্রান্ত।” বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ‘ভূমি মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন আইন সম্পর্কে ধারণা প্রদান এবং রিট মামলার জবাব প্রেরণ প্রক্রিয়া বিষয়ক লার্নিং সেশনে’ তিনি এ কথা বলেন।
সিনিয়র সচিব বলেন, ভূমির সঙ্গে মামলার একটি সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। কারণ ভূমির মালিকানা, দখল, হস্তান্তর বা অন্য কোনো বিরোধ দেখা দিলে তা আদালতে মামলা হিসেবে দায়ের করা হয়। যা দেওয়ানি বা ফৌজদারি প্রকৃতির হতে পারে। এই মামলাগুলোর মাধ্যমে জমির আইনি অধিকার প্রতিষ্ঠা, অবৈধ দখল থেকে মুক্তি বা জমির সঠিক মালিকানা নির্ধারণ করা হয়।
ভূমি সংক্রান্ত মামলার পরিসংখ্যান ও বাস্তবতা:
1. টিআইবি (২০১৫) প্রতিবেদন:
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) তাদের এক গবেষণায় উল্লেখ করেছে যে, দেশে মোট ১৮ লাখ ভূমি মামলা বিচারাধীন রয়েছে, যা মোট মামলার প্রায় ৬০ শতাংশ। এই মামলাগুলোর অধিকাংশই ঘুষ ও দুর্নীতির কারণে দীর্ঘসূত্রিতায় পড়েছে। ভূমি জরিপ, নামজারি, রেজিস্ট্রেশনসহ বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় অনিয়ম ও দুর্নীতি ভূমি মামলার সংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।
2. রাইজিংবিডি (২০১৫) প্রতিবেদন:
রাইজিংবিডি.কম-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভূমি সেবায় ঘুষ ও দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে, যার ফলে ১৮ লাখ মামলা দীর্ঘসূত্রতায় পড়েছে। এই মামলাগুলো মোট মামলার ৬০ শতাংশ। ভূমি রেজিস্ট্রেশন, নামজারি ও করের হার নির্ধারণের ক্ষেত্রে সুশাসনের ঘাটতি লক্ষ্য করা গেছে।
3. রাজশাহী বিভাগের উদাহরণ:
রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় প্রায় ৪ লাখ মামলা বিচারাধীন রয়েছে, যার মধ্যে ৩৫ হাজার জমি সংক্রান্ত মামলা। বিচারক সংকট ও আদালতের অবকাঠামোগত সমস্যা কারণে মামলার দীর্ঘসূত্রিতা বাড়ছে।
4. মামলার আর্থিক ক্ষতি:
অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারকাতের গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রায় ১২ কোটি মানুষ ভূমি মামলার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত। মামলাজনিত খরচ বছরে ২৪ হাজার ৮৬০ কোটি টাকা, যার ৫০ শতাংশই ঘুষ হিসেবে ব্যয় হয়। এছাড়া, মামলাজনিত ক্ষতির পরিমাণ বছরে ১১ দশমিক ৫১৯ কোটি টাকা।
সারসংক্ষেপ:
বাংলাদেশে ভূমি সংক্রান্ত মামলার সংখ্যা অত্যধিক এবং এটি দেশের বিচার ব্যবস্থার উপর চাপ সৃষ্টি করছে। টিআইবি ও অন্যান্য গবেষণায় ভূমি মামলার সংখ্যা মোট মামলার ৬০ থেকে ৮০ শতাংশের মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে। এই মামলাগুলোর অধিকাংশই ঘুষ, দুর্নীতি, এবং প্রশাসনিক জটিলতার কারণে দীর্ঘসূত্রতায় পড়েছে। ভূমি জরিপ, নামজারি, রেজিস্ট্রেশনসহ বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় অনিয়ম ও দুর্নীতি ভূমি মামলার সংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।
সুপারিশ:
ভূমি সংক্রান্ত মামলার সংখ্যা কমাতে এবং বিচার প্রক্রিয়া দ্রুততর করতে নিম্নলিখিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে:
Leave a Reply