1. lawyermanik@gmail.com : legalaidbd :
November 23, 2025, 9:36 pm

ভারতকে তো হারানো গেল, কোন পথে হামজার বাংলাদেশ

  • Update Time : Wednesday, November 19, 2025
  • 57 Time View

রাত ১১টার কাঁটা ছুঁই ছুঁই। সাংবাদিকদের ভরা কক্ষে হামজা চৌধুরী প্রবেশ করতেই করতালিতে ফেটে পড়লেন সবাই। ভারতকে হারানোর আনন্দে মাতোয়ারা সংবাদ সম্মেলন কক্ষ। সামনে বসতেই অভিনন্দন জানানো হলো হামজা চৌধুরীকে, গত রাতে ১–০ গোলে বাংলাদেশের জয়ের অন্যতম নায়ককে।

২২ বছর পর ভারতের বিপক্ষে জয়ে জাতীয় স্টেডিয়ামের গ্যালারি তখনো কাঁপছে। লাল-সবুজের ঢেউয়ে ভেসেছে দেশের ফুটবলতীর্থ। ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয় শুধুই একটা জয় নয়, এর চেয়েও বেশি কিছু। যখন আপনি জানবেন ভারতের কাছে হারের বা ড্র করার একের পর হতাশার গল্প, যখন জানবেন জিততে জিততে ড্র কিংবা হেরে মন খারাপ করে মাঠ ছাড়ার কাহিনি আছে অনেক, তখন এই জয় শুধু একটি জয়েই সীমাবদ্ধ থাকে না হয়ে ওঠে অনেক আবেগময়।

নির্ভুল আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে NBR তালিকাভুক্ত
কর আইনজীবীর পরামর্শ নিন। মানিক দাস, কর আইনজীবী

https://af3116b415fe778a333365db0cf8e9fb.safeframe.googlesyndication.com/safeframe/1-0-45/html/container.html ২০০৩ সালে ঢাকায় সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনালে যে আবেগে ভেসেছিল গোটা দেশ; মতিউর মুন্নার গোল্ডেন গোলে ভারতকে হারিয়ে সাফের ফাইনালে উঠেছিল জর্জ কোটানের বাংলাদেশ। এরপর গত ২২ বছরের দুই দলের ১০ সাক্ষাতে বাংলাদেশ একটি ম্যাচও জেতেনি ৬ ড্র, ৪ হার। প্রায় দুই যুগ পর আবার ভারতকে হারাতে পারল লাল–সবুজের দল। সেদিক থেকে এই জয়ের মাহাত্ম্য অনেক। আর দশটা জয় থেকে পুরোপুরি আলাদা, যেখানে মিশে আছে গর্ব, অপেক্ষা ফুরোনোর তৃপ্তিও।

এমন উৎসবের রাতেই আরেকবার আলোয় উঠে এলেন ইংল্যান্ডে জন্ম নেওয়া, লেস্টার সিটির হয়ে এফএ কাপ জেতা ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হামজা চৌধুরী। গতকাল ভারতের বিপক্ষে এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের এই ম্যাচে গোল করে হয়তো নায়ক শেখ মোরছালিন, তবে দুরন্ত হেডে নিশ্চিত গোল বাঁচিয়ে হামজাও কেড়ে নেন আলো। অবশ্য হাজমার জন্য এ আর নতুন কি! বাংলাদেশের হয়ে আগের ছয় ম্যাচে চার গোল করে আলো ছড়িয়েছেন তো আগেই।

শিলংয়ে ভারতের বিরুদ্ধে দারুণ পারফরম্যান্স, ঢাকায় দ্বিতীয় ম্যাচেই গোল তারপর হামজা বাংলাদেশ দলের শক্তির নিয়মিত উৎস। ভুটানের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে দুর্দান্ত হেড, হংকং চায়নার বিপক্ষে ফ্রি–কিক, নেপালের বিপক্ষে পেনাল্টি ও অবিস্মরণীয় বাইসাইকেল কিকে গোল। প্রতিটি গোলেই নতুন করে স্বপ্ন দেখানো। হামজা যেন নেমে এসেছেন নতুন আলোর মতো। তাঁকে অনুসরণ করতে, তাঁকে নিয়ে প্রামাণ্য চিত্র তৈরি করতে লেস্টার সিটির ইউটিউব থেকে প্রতিনিধি এসেছেন ঢাকায়, সঙ্গে নিরাপত্তাকর্মী। তাঁরা ঢাকায় এসে ছায়ার মতো অনুসরণ করেছেন হামজাকে। আর এতে বাংলাদেশের ফুটবলের বিজ্ঞাপন হচ্ছে বিদেশে।

শুধু ‘পোস্টার বয়’ হামজা নন, আজ জাতীয় দলে প্রবাসী ফুটবলার সাতজন জামাল ভূঁইয়া, তারিক কাজী, কাজেম শাহ, হামজা চৌধুরী, ফাহামিদুল ইসলাম, শমিত সোম এবং সর্বশেষ যোগ দিয়েছেন কিউবা মিচেল। তাঁদের আগমন এক নতুন সম্ভাবনার আভাস দিচ্ছে নিঃসন্দেহে। দল হয়েছে শক্তিশালী। আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে এই বাংলাদেশ প্রতিপক্ষের কাছ থেকে বাড়তি সমীহ পাচ্ছে। সেটি শুধু হামজার মতো বিশ্বমানের ফুটবলার আছেন বলেই নয়, একটা দল হয়ে খেলতে পারার কারণেও।

এটিকে বাংলাদেশে ফুটবল–বিপ্লবের পূর্ণতা দেওয়ার প্রথম পদক্ষেপ বলছেন অনেকে। বলতেই পারেন। বাংলাদেশ নিজেদের শক্তিটা দেখিয়েছে। মানুষের মধ্যে এই আত্মবিশ্বাস ছড়িয়ে দিতে পেরেছে যে আরও কিছুটা সামনে এগোনো সম্ভব। যদিও বাংলাদেশের আপাতত কোনো ম্যাচ নেই। আগামী ৩১ মার্চ সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে শেষ ম্যাচ। তারপর বাংলাদেশ কোথায় খেলবে, কোন প্রতিযোগিতায় খেলবে, তা এখনো অজানা।

তবে এটা জানা যে এই বাংলাদেশ লড়াকু যারা গোল করে ৭৯ মিনিট তা ধরে রাখার দৃঢ়তা দেখাতে পারে। এই বাংলাদেশের খেলা দেখতে মাঠে ছোটেন দর্শক। কালোবাজারিতে ৬০০ টাকার টিকিট বিক্রি হয় ২ থেকে ৩ হাজার টাকায়। যাঁরা কখনো ফুটবল দেখতেন না, তাঁদের কাছেও ফুটবল এখন বেশ আকর্ষণীয়। ঢাকার রাস্তায় ফুটবল জনতার মিছিল হচ্ছে। কাল ভারত ম্যাচের আগে স্টেডিয়াম এলাকায় তেমন মিছিল দেখে মুগ্ধ হতে হয়েছে। অনেক নারী দর্শক মাঠে যাচ্ছেন ফুটবল দেখতে। সবার মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা, স্বপ্ন আর বিশ্বাস; বাংলাদেশ পারবে।

কিন্তু স্বপ্নের আড়ালে লুকিয়ে আছে কঠিন বাস্তবতা। এই উৎসব সত্ত্বেও কড়া সত্যটি হলো, বাংলাদেশ উঠতে পারেনি ২০২৭ এশিয়ান কাপের মূল পর্বে। চার দলের গ্রুপে সেরা হতে পারলে তবেই যাওয়া যেত। কিন্তু ঘরের মাঠে হংকং ও সিঙ্গাপুরের সঙ্গে ভালো খেলেও হার, ভারতে অ্যাওয়ে ম্যাচে সুযোগ পেয়েও ড্রয়ের কারণে হয়নি।

কালকের জয় স্বস্তি দিলেও বড় লক্ষ্য পূরণ হয়নি। হামজা-শমিতের মতো খেলোয়াড় নিয়েও অনেকটা আগেই এশিয়ান কাপের লড়াই থেকে ছিটকে যাওয়া ব্যর্থতাই। ইতিহাসে সেরা শক্তির দল নিয়েও পারল না বাংলাদেশ। যদিও দশ ম্যাচ পর এই প্রথম এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে জয় এসেছে।

সেই আনন্দ নিয়ে কাল রাতে সংবাদ সম্মেলনে হামজা যখন বললেন, সামনে কোনো টুর্নামেন্ট জিততে চান, তবেই ‘পুরোপুরি তৃপ্ত’ হবেন, তখন দেশের ফুটবলের বাস্তব ছবিটা সামনে আসে। সেই বাস্তবতার নাম ঘরোয়া ফুটবলের ভয়াবহ অবস্থা। জাতীয় দল ২২ বছর ধরে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জেতে না। এই লম্বা সময়ে দেশে ফুটবল অবকাঠামো সেভাবে গড়ে ওঠেনি। ভেঙে পড়া ঘরোয়া কাঠামোই বাংলাদেশ ফুটবলের আসল সমস্যা আজও। দেশের প্রিমিয়ার লিগের বেশির ভাগ ক্লাবের নেই নিজস্ব মাঠ, নেই সমর্থক, নেই পৃষ্ঠপোষকতা। ক্লাবগুলো দিন দিন দুর্বল হচ্ছে। ভালো বিনিয়োগ করতে পারছে না। ৯০ শতাংশ ক্লাবে নেই পেশাদারত্ব। ন্যূনতম একটা ওয়েবসাইট পর্যন্ত নেই ক্লাবের। ফুটবলাররা বেতন পান না নিয়মিত। নিচের লিগগুলো অনিয়মিত, অনেক জেলায় ঘরোয়া ফুটবল প্রায় মৃত।

তাই প্রশ্ন আসে, হামজাসহ শুধু প্রবাসীদের আলোয় ভর করে কত দূর যাবে জাতীয় দল? এক-আধ ম্যাচ জয় উৎসব আনে, কিন্তু ঢেকে রাখতে পারে না কাঠামোগত বিপর্যয়। ফুটবল এক দিনের খেলা নয়, এটা দীর্ঘমেয়াদি নির্মাণ। যেখানে প্রয়োজন অবকাঠামো, পরিকল্পনা, তৃণমূল লিগ, কোচিং, রেফারিং আর একটি সুদৃঢ় ক্লাব কাঠামো। এর কোনোটিই শক্তিশালী অবস্থানে নেই।

গত বছর দেশে সরকারবদলের পর প্রিমিয়ার লিগ থেকে বিদায় নিয়েছে দুই ক্লাব। ফুটবলারদের বাজারে ধস নেমেছে। কোটি টাকার ফুটবলারের দাম নেমে এসেছে ৪০ লাখে। বহু খেলোয়াড় মাসে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা পান, তা–ও নিয়মিত নয়। কান পাতলেই শোনা যায় ফুটবলারদের হাহাকার। তাই হামজা, জামাল, তারিকরা যতই আলো আনুন, সেই আলো আরও স্পষ্ট করে ঘরোয়া ফুটবলের অন্ধকার। ইংল্যান্ড-ডেনমার্ক-কানাডা-ইতালি থেকে আসা প্রতিভারা দলকে শক্তি দিচ্ছেন, কিন্তু দেশের ফুটবলে পায়ের নিচে মাটি নেই।

একটা ফুটবল দল শুধু ফরোয়ার্ড লাইনের ওপর দাঁড়ায় না, দেশের ফুটবলও দাঁড়ায় না শুধু প্রবাসীদের ওপর। কিশোর লিগ, অঞ্চলভিত্তিক প্রতিযোগিতা, রেফারিদের সম্মান, কোচিংয়ে উন্নয়ন, সঠিক লাইসেন্সিং এসবই ফুটবল উন্নয়নের আসল ভিত। এই ভিত না থাকলে জাতীয় দলের আলো ক্ষণিকের, যা দীর্ঘদিন টেকে না।বাফুফে বড় ম্যাচের আগে চাকচিক্যের ঝড় তোলে। ব্যানার, কনসার্ট, ফুলের সংবর্ধনায় ভাসায় চারপাশ। কিন্তু ভেতরের হালটা রুগ্‌ণই থেকে যায়। এ দেশে রেফারিরা নিয়মিত ধর্মঘটে যান সময়মতো পারিশ্রমিক না পেয়ে। এ–ই যদি হয় আসল ছবি, তাহলে হামজাদের নিয়ে স্বপ্ন দেখতে ভয় লাগবেই।

এ দেশ বহু জেলায় লিগ নেই, মাঠ নেই, ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন নিষ্ক্রিয়। যুব লিগ, অনূর্ধ্ব-১৪, অনূর্ধ্ব-১৬ অনিয়মিত। তৃণমূল ফুটবল রয়ে গেছে অবহেলিত। শুধু জাতীয় দল নিয়েই যত ব্যস্ততা। জাতীয় দল যেন রাজহাঁসের মতো। কিন্তু যে পুকুরে সেই রাজহাঁস ভাসে (ঘরোয়া লিগ), সেই পুকুরেই পানি নেই। পুকুর শুকালে রাজহাঁস বাঁচবে কীভাবে?

দেশের সব জেলায় নিয়মিত লিগ চালু করতে হবে। মাঠ সংস্কার, কোচিং সেন্টার, রেফারিদের সম্মান ও পারিশ্রমিক নিশ্চিত করতে হবে। ক্লাব লাইসেন্সিং কঠোর করা জরুরি। বাফুফেকে দায়িত্বশীল হতে হবে। জাতীয় দলকে শুধু সাজিয়ে রাখা নয়, নিচের কাঠামোকে বাঁচাতে হবে। লিগের ভিত্তি শক্ত করতে হবে। চালচুলোহীন ক্লাবগুলোকে উঠে দাঁড়াতে হবে। না হলে জাতীয় দলের উজ্জ্বলতা শুধু মরীচিকা হয়ে থাকবে। এই সত্য বাফুফে ও দেশের ক্রীড়া প্রশাসন যত দ্রুত বুঝবে, ততই ভালো।হাজমা চৌধুরীর পেছনে নামীদামি ব্র্যান্ডগুলো লাইন দিয়েছে। যদিও হামজার বাবা বলেছেন, ‘হামজা এই দেশকে দিতে এসেছে, নিতে নয়।’ এই আলোর মাঝে নির্মম বাস্তবতা হচ্ছে, কদিন আগে প্রথম বিভাগ ফুটবল লিগ শুরু হয়েছে আনুষ্ঠানিক স্পনসর ছাড়াই। দেশের শীর্ষ লিগ বাংলাদেশ লিগে স্পনসর, লোগো কোনো কিছুই এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান নয়। অথচ লিগ শুরু হয়েছে প্রায় দুই মাস।

এই যদি হয়ে দেশের শীর্ষ লিগের অবস্থা, তখন ভারতকে হারানোর পরও বাস্তবতার জমিনে পা রাখাই ভালো।


নির্ভুল আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে NBR তালিকাভুক্ত
কর আইনজীবীর পরামর্শ নিন। মানিক দাস, কর আইনজীবী

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2017 LegalAidBD
Theme Customized By BreakingNews