National Board of Revenue (NBR), বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের জন্য দেওয়া সাম্প্রতিক সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ “সুখবর”গুলো বিস্তারিতভাবে দেওয়া হলো আপনি নিজের ব্যবসার ক্ষেত্রে কোন বিষয়গুলো প্রযোজ্য তা নিরীক্ষণ করতে পারবেনঃ
উল্লেখযোগ্য সুসংবাদ:
নির্ভুল আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে NBR তালিকাভুক্ত
কর আইনজীবীর পরামর্শ নিন। মানিক দাস, কর আইনজীবী
- অগ্রিম কর (Advance Tax) সহজীকরণ
NBR বলছে, আগামী অর্থবছর (FY 26) বাজেটে এমন একটি ধারা নিয়ে আসা হচ্ছে যাতে ব্যবসাগুলো লাভ কম বা তলানিতে থাকলে তারা আগামভূক্ত অগ্রিম কর (minimum advance tax) পরবর্তী বছরে তার আয় বাড়লে সেটিকে খরচ/কর হিসেবে বিবেচনায় রাখতে পারবে।
অর্থাৎ: যদি আপনার বছরের আয় কম হয়, তবে আগাম কর দিয়েও পরে সেই করটিকে ভবিষ্যতের আয় থেকে কেটে নেওয়ার সুযোগ থাকছে।
এটা ব্যবসায়ীদের জন্য পজিটিভ পদক্ষেপ বলা হচ্ছে কারণ অনেক সময় খরচ বেশি, আয় কম থাকে তখন আগাম কর বোঝা হয়ে যায়।
- উৎপাদন ও রপ্তানি–খাতে কাঁচামাল আমদানি সহজ করা
NBR অনুমোদন দিয়েছে যে রপ্তানিমুখী নয় এমন অংশেও কিছু খাতকে (যেমন প্রক্রিয়াজাত খাবার, হালকা প্রকৌশল, আসবাবপত্র, প্লাস্টিক পণ্য, চামড়ার পণ্য) কাঁচামাল আমদানি করতে পারবে কাস্টমস শুল্ক ছাড় (দায়িত্ববিহীন আমদানির সুবিধা) দিয়ে, ব্যাংক গ্যারান্টির বিনিময়ে।
এর মাধ্যমে তারা আগে শুল্ক দিয়ে আমদানি করতেন, পরে রপ্তানি করেই রিফান্ড নেওয়ার ঝামেলায় পড়তেন এখন ব্যাংক গ্যারান্টি দিয়ে কাজ সহজ হয়েছে।
এই সিদ্ধান্ত মূলত রপ্তানীমুখী পোশাক খাতের বাইরেও রপ্তানি-বৈচিত্র্য বাড়ানোর উদ্যোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
‘ডীমড এক্সপোর্ট’ (Deemed Export) শিল্প–সরবরাহে ভ্যাট নিয়ম সহজীকরণ:
NBR ভ্যাট বিভাগে নীলবাহী রপ্তানিমুখী শিল্পে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান যারা “ডীমড এক্সপোর্ট” হিসেবে কাজ করে (যেমন: রপ্তানিমুখী কারখানার সার্বিক উপকরণ বা সেবা সরবরাহ করা) তাদের জন্য ভ্যাট-সংক্রান্ত শর্তগুলো সহজ করেছে।
অর্থাৎ: এমন সরবরাহ যারা রপ্তানিমুখী উৎপাদনে ব্যবহৃত হয় তারা ভ্যাট ছাড় সুবিধা পেতে পারছে, যা উৎপাদন খরচ কমাতে সাহায্য করবে।
- স্থানীয়–সরবরাহকারী শিল্পের জন্য ভ্যাট–ছাড় সুযোগ
রপ্তানিমুখী বন্ডেড শিল্পের জন্য এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে, স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করা উপকরণ ও সেবা যদি উৎপাদন ফ্যাক্টরিতে রপ্তানির জন্য ব্যবহৃত হয় তাহলে সেই ক্ষেত্রে স্থানীয় সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ভ্যাট ছাড় পাবে। এটি মূলত পোশাক, ফ্যাক্টরি-সাপ্লাই চেইনে খরচ কমাবে এবং স্থানীয় অংশীদারদের উৎসাহ দেবে, রপ্তানিমুখী উৎপাদনে স্থানীয় অংশ বাড়বে।
জানা জরুরি কিছু বিষয়:
- যদিও বেশ কয়েকটি সুবিধা দেওয়া হচ্ছে, তবে একাধিক রপ্তানিমুখী খাতে কর ছাড় বা সুবিধা কমানোর সম্ভাবনাও রয়েছে বিশেষ করে
- উদাহরণস্বরূপ: রপ্তানিমুখী পোশাক খাতে কর হার ১২% ও ১০% (গ্রিন ফ্যাক্টরি) দেওয়া হয়েছে যা ৩০ জুন ২০২৮ সাল পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।
- তবে NBR বলছে এসব সুবিধা ধীরে ধীরে বা পর্যায়ে পর্যায়ে কমানো হতে পারে, বিশেষ করে IMF-এর চাপে।
- কোনো সুবিধা প্রযোজ্য হলে তার সংশ্লিষ্ট শর্তগুলো ভালোভাবে পড়ে নেওয়া জরুরি যেমন ব্যাংক গ্যারান্টি, রপ্তানি অর্ডার দেখাতে হবে, মূল্য সংযোজন (value-addition) রাখতে হবে ইত্যাদি। যেমন আমদানির ক্ষেত্রে বলা হয়েছে মিনিমাম ৩০% মূল্য সংযোজন থাকতে হবে।
- উৎপাদন খরচ, বৈশ্বিক চাহিদা, লজিস্টিক ইত্যাদি আরও চ্যালেঞ্জ রয়েছে তাই শুধু কর বা শুল্ক ছাড়ই যথেষ্ট নয়।
ব্যবসায়ীদের জন্য করণীয় সুপারিশ:
- আপনার ব্যবসা যদি রপ্তানিমুখী হয় বা রপ্তানিমুখী খাতের সঙ্গে সংযুক্ত হয় (সরবরাহকারী, উপকরণ, সেবা) তাহলে উপরোক্ত সুবিধাগুলি আপনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য কি না, দ্রুত একজন কর/অ্যাকাউন্টিং বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যাচাই করুন।
- রপ্তানির জন্য কাঁচামাল আমদানির পরিকল্পনা থাকলে ব্যাংক গ্যারান্টি দিতে প্রস্তুত থাকুন এবং রপ্তানি অর্ডার বা এলসি (Letter of Credit)-র মতো প্রমাণ রাখুন।
- ভ্যাট ছাড় বা ডীমড এক্সপোর্ট সুবিধা নিতে হলে সংশ্লিষ্ট শর্ত (যেমন অংশীদারতা, রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠান, বিদেশি মুদ্রায় লেনদেন ইত্যাদি) পূরণ করছেন কি না দেখুন।
- পূর্ববর্তী কর বা শুল্ক ছাড় নিয়মের মেয়াদ, পরিবর্তনের সম্ভাবনা ইত্যাদি নজর রাখুন— কারণ আগাম কর ছাড় বা কর হার কম থাকতে পারে তবে তা ভবিষ্যতে পরিবর্তন হতে পারে।
নির্ভুল আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে NBR তালিকাভুক্ত
কর আইনজীবীর পরামর্শ নিন। মানিক দাস, কর আইনজীবী
Leave a Reply