পৃথক বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট আদালত গঠনের নির্দেশ দেশের সব জেলায়
Update Time :
Wednesday, October 15, 2025
41 Time View
“সব জেলায় পৃথক বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট আদালত গঠনের” নির্দেশনার প্রেক্ষাপট, আইনগত ভিত্তি, কার্যকর অতলুস্বরূপ ধাপ ও চ্যালেঞ্জ বিষয়ক বিশ্লেষণ দেওয়া হলো:
নির্দেশনারসারাংশওপ্রেক্ষাপট:
নির্ভুল আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে NBR তালিকাভুক্ত
কর আইনজীবীর পরামর্শ নিন। মানিক দাস, কর আইনজীবী
১৪ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে, যেখানে সব জেলার জন্য পৃথক বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট (Judicial Magistrate) আদালত গঠন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে যে, বর্তমানে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (Chief Judicial Magistrate) / চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (Chief Metropolitan Magistrate) দপ্তরে কার্যরত ম্যাজিস্ট্রেটেরা একসাথে বেশ কয়েকটি দায়িত্ব পালন করেন যেমন অপরাধ মামলা আমলে নেওয়া, বিচার পরিচালনা, পুলিশ-তদারকি, রিমান্ড ও জামিন শুনানি, বিশেষ আইন অধীন সামারি আদালত পরিচালনা, অ্যাফিডেভিট গ্রহণ ইত্যাদি।
যেহেতু এই মিশ্র দায়িত্বের কারণে ম্যাজিস্ট্রেটদের বিচারিক কাজের জন্য পর্যাপ্ত সময় দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না, তাই নির্দেশনায় বলা হয়েছে: ম্যাজিস্ট্রেট আদালতগুলিকে কিছু আদালতকে শুধুই বিচারিক (judicial) কাজের জন্য এবং কিছু আদালতকে শুধু আমলি (cognizance / প্রশাসনিক ও তদন্ত-সহায়ক) কাজের জন্য পৃথক করে দায়িত্ব দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে।
অর্থাৎ, একই দায়িত্ব বহনকারী ম্যাজিস্ট্রেটদের বিচার ও আমলি কাজ পৃথক আদালতে বণ্টন করা হবে, যাতে বিচারিক মামলাগুলো দ্রুত ও মনোযোগ সহকারে পরিচালিত হতে পারে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে যে, সংশ্লিষ্ট চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট / চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটদের এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং বিদ্যমান আদালতগুলির মধ্যে এমনভাবে বণ্টন করতে হবে যাতে কিছু আদালত শুধুমাত্র বিচারিক কাজ ও কিছু শুধু আমলি কাজ করে।
এই নির্দেশনা মূলত “বিচারিক জট কমানো ও দ্রুত নিষ্পত্তি নিশ্চিত করার” উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছে।
আইনগতওসংবিধানিকভিত্তি:
এই নির্দেশনাটি একটি “সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন” বিজ্ঞপ্তি, যেটি বিচার বিভাগ কর্তৃক জারি হয়েছে। তবে এই ধরনের নির্দেশ বাস্তবায়নের জন্য নির্ধারিত আইন ও প্রক্রিয়া থাকতে হবে। কিছু প্রাসঙ্গিক দিক:
ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ও বিচারিক ক্ষমতা‑বণ্টন বাংলাদেশ দণ্ডবিধি (CrPC) ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
বিচার বিভাগের অভ্যন্তরীণ প্রশাসনিক ক্ষমতা (administrative control) ও সুপ্রিম কোর্টের কর্তৃত্ব এই ধরনের নির্দেশনার ভিত্তি হতে পারে, তবে এটি আইনবহির্ভূত নয় এমন দিক থাকলে আইন সংশোধন বা বিধি-প্রণয়ন প্রয়োজন হতে পারে।
বিচার বিভাগ ও সরকার (আইন মন্ত্রণালয়, আইন ও বিচার বিভাগ) মধ্যে সমন্বয় অপরিহার্য হবে, কারণ আদালতের সংখ্যা, অধিধিকার বণ্টন, বিচারক নিয়োগ, অবকাঠামো ইত্যাদি বিষয়গুলি মন্ত্রণালয় ও বিচার বিভাগের যৌথ উদ্যোগে সম্পাদিত হবে।
প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট আইন পরিবর্তন, নিয়মাবলী প্রণয়ন বা অধ্যাদেশ গ্রহণ করতে হতে পারে, যাতে “বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট আদালত” হিসেবে পৃথকীকরণ কার্যকর হয়।
বাস্তবায়নপ্রক্রিয়াওধাপ:
নিচে সম্ভাব্য প্রক্রিয়া ও ধাপ দেওয়া হলো যা এ নির্দেশনা সফলভাবে কার্যকর করতে সহায়ক হবে:
ধাপ
কার্যক্রম
বিবরণ / বিবেচ্যবিষয়
১
পরিকল্পনা ও প্রয়োজন নিরূপণ
প্রতিটি জেলার ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের অভিযোগ-পরিমাণ, বিচারিক মামলার সংখ্যা, ম্যাজিস্ট্রেট সংখ্যা, অবকাঠামো চিহ্নিত করা হবে
২
আদালত বণ্টন ও শ্রেণিবিন্যাস
কিছু আদালত বিচারিক কাজের জন্য, কিছু আমলি কাজের জন্য নির্ধারণ করতে হবে
৩
বিচারক ও কর্মকর্তার স্থানান্তর ও নিয়োগ
বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে যাদের বিশেষ দক্ষতা থাকবে, তাদের নির্বাচন ও স্থানান্তর
৪
অবকাঠামো ও সরবরাহ
কক্ষে আদালত বরাদ্দ, দাপ্তরিক উপকরণ, রেকর্ড সংরক্ষণ ব্যবস্থা ইত্যাদি
৫
আইন ও নির্দেশনা প্রণয়ন
প্রয়োজনীয় নিয়মাবলী, মৌলিক নির্দেশিকা, প্রোটোকল তৈরি করতে হবে
৬
প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা বৃদ্ধি
সংশ্লিষ্ট বিচারক, ম্যাজিস্ট্রেট, দফতর কর্মীদের নতুন কার্যপ্রণালীর উপর প্রশিক্ষণ দেওয়া
৭
পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন
শুরু পর্যায়ে কার্যকারিতা মূল্যায়ন করা, সমস্যা চিহ্নিত করা ও সমন্বয় করা
৮
ধাপে ধাপে সম্প্রসারণ
প্রথমে কয়েক জেলা বা বিভাগে প্রয়োগ করে ফলাফল দেখে ধাপে ধাপে পুরো দেশের জন্য সম্প্রসারণ
চ্যালেঞ্জওপ্রতিবন্ধকতা:
এই ধরনের বড় ধরনের পুনরোর্গাণের ক্ষেত্রে কয়েকটি চ্যালেঞ্জ আসতে পারে:
মানবসম্পদসংকট: যথেষ্ট সংখ্যক প্রশিক্ষিত বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কর্মকর্তাদের ব্যবস্থা করা কঠিন হতে পারে।
অবকাঠামোগতসীমাবদ্ধতা: নতুন আদালত কক্ষ, রেকর্ড সংরক্ষণ ব্যবস্থা, অফিস সরঞ্জাম ইত্যাদির অভাব থাকতে পারে।
আইনিওবিধিগতবাধা: যদি কোনো আইন বা বিধি বর্তমান নির্দেশনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়, সংশোধন প্রয়োজন হতে পারে।
যৌথদায়িত্ববিভাজনএবংসমন্বয়: যেখানে আদালত বিবেচনায় ও আমলি কাজ একত্রে হয়, সেখান থেকে বিভাজন ও দায়িত্ব হস্তান্তর সমস্যা হতে পারে।
পরিবর্তন–প্রতিরোধ: কর্মকর্তারা পরিবর্তন স্বীকার করতে অনিচ্ছুক হতে পারে বা নতুন ব্যবস্থায় মানিয়ে নিতে দেরি হতে পারে।
সমন্বয়ওপর্যবেক্ষণ: জেলা আদালত, বিচার বিভাগ ও আইন মন্ত্রণালয় মধ্যে সমন্বয় সঠিকভাবে না হলে বাস্তবায়ন বিঘ্নিত হতে পারে।
Leave a Reply