শূন্য রিটার্ন মানে সবকিছু শূন্য নয়” এই বক্তব্যটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সচেতনতা বৃদ্ধির বার্তা বহন করে। অনেকেই মনে করেন, যদি তাদের আয় না থাকে বা করযোগ্য না হয়, তাহলে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার প্রয়োজন নেই। বাস্তবতা হলো, শূন্য রিটার্ন (Zero Income Tax Return) জমা দেওয়াও অনেক দিক থেকে উপকারী, এবং এটি করদাতার আর্থিক সচেতনতা, দায়িত্ববোধ এবং ভবিষ্যতের প্রস্তুতির ইঙ্গিত দেয়।
করদাতার জন্য ৭টি পরামর্শ তুলে ধরছি:
১. কর রিটার্ন দাখিলের অভ্যাস গড়ে তুলুন:
শুরুতে আয় না থাকলেও রিটার্ন জমা দেওয়া একটি ভালো অভ্যাস। এটি আপনাকে করব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত রাখে এবং ভবিষ্যতে আয় শুরু হলে রিটার্ন ফাইলিং প্রক্রিয়া সহজ হয়। বিশেষ করে যারা নতুন চাকরি পেয়েছেন বা এখনও পড়াশোনা করছেন, তাদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ।
উদাহরণ: একজন ছাত্র যার এখন আয় নেই, কিন্তু ভবিষ্যতে ফ্রিল্যান্সিং বা চাকরি করবেন শূন্য রিটার্ন জমা দিলে তার কর হিসাব চালু থাকবে।
২. ভবিষ্যতের ভিসা বা ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়ায় সহায়ক:
অনেক দেশ ভিসা দেওয়ার আগে ২–৩ বছরের আয়কর রিটার্ন দেখতে চায়, বিশেষ করে ব্যবসা, পড়াশোনা বা স্থায়ী বসবাসের ভিসার ক্ষেত্রে। রিটার্ন না থাকলে আবেদন দুর্বল হয়ে পড়ে, এমনকি বাতিলও হতে পারে।
উদাহরণ: আপনি কানাডা বা ইউকে তে স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করছেন তখন শূন্য রিটার্নও আপনার আর্থিক রেকর্ড হিসেবে কাজ করতে পারে।
৩. ব্যাংক ঋণ বা কার্ড পেতে সহায়তা করে:
আপনি যদি ব্যাংক ঋণ, গৃহঋণ বা ব্যবসার জন্য লোন নিতে চান, ব্যাংক সাধারণত ২-৩ বছরের আয়কর রিটার্ন চায়। শূন্য রিটার্ন হলেও তা দেখায় আপনি আর্থিকভাবে সচেতন এবং নিয়মিত ফাইলিং করেন।
টিপস: ব্যবসা বা স্টার্টআপ শুরু করার আগেই রিটার্ন জমা শুরু করুন।
৪. আর্থিক স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি হয়:
আয় না থাকলেও রিটার্ন জমা দিলে আপনি সরকারের কাছে আর্থিকভাবে স্বচ্ছ একজন নাগরিক হিসেবে বিবেচিত হন। এটি ভবিষ্যতের অনেক প্রশাসনিক কাজেও সহায়ক হতে পারে।
মনে রাখুন: আপনি কর দিচ্ছেন না মানে আপনি লুকিয়ে যাচ্ছেন এটা যেন না বোঝায়। বরং আপনি “আয় নেই, তবুও রিটার্ন দিচ্ছেন” এটা ইতিবাচক।
৫. আগামী বছরে আয় হলে হিসাব রাখা সহজ:
যদি আপনি হঠাৎ বড় অংকের আয় করেন (যেমন: ফ্রিল্যান্সিং, ব্যবসা, উপার্জনের নতুন উৎস), তাহলে আগের রিটার্ন আপনাকে ব্যাকডেট হিসাব দেখাতে সাহায্য করবে। ট্যাক্স অফিস এ ব্যাপারে রেকর্ড দেখতে চাইতে পারে।
উদাহরণ: ধরুন আপনি ২০২৫-এ ফ্রিল্যান্সিং শুরু করলেন, কিন্তু আয় ভালো হওয়ায় ট্যাক্স রিটার্ন লাগছে। আপনি যদি ২০২৩- ২৪-এ শূন্য রিটার্ন দিয়ে থাকেন, সেটা আপনাকে প্রমাণ করতে সাহায্য করবে যে তখন আয় ছিল না।
৬. ব্যবসা বা পেশাগত লাইসেন্স পেতে সহজ হয়:
অনেক ক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্স, TIN, BIN বা অন্য সরকারি সুবিধা পেতে হলে আয়কর রিটার্নের কপি জমা দিতে হয়। শূন্য রিটার্ন থাকলে আপনি তখন বাধা ছাড়া এগোতে পারেন।
বিশেষ করে: যারা ফ্রিল্যান্সার, উদ্যোক্তা বা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী।
৭. আইনি জটিলতা বা অডিটে নিজেকে নিরাপদ রাখে:
কর বিভাগ যদি কখনও আপনার আয় বা সম্পদের কোনো বিষয়ে প্রশ্ন তোলে, তখন আপনি আগের রিটার্ন দেখিয়ে প্রমাণ করতে পারবেন যে আপনি করব্যবস্থার বাইরে নন, বরং নিয়মিত রিটার্ন জমা দেন।
টিপস: কোনো সম্পদ কেনার আগে আগের কয়েক বছরের রিটার্ন দাখিল থাকলে কর কর্তৃপক্ষ সহজেই আপনার অর্থের উৎস গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করে।
অতিরিক্ত টিপস:
উপসংহার:
“শূন্য রিটার্ন মানে সবকিছু শূন্য নয়” এটি শুধু একটি বার্তা নয়, বরং একজন সচেতন নাগরিকের অর্থনৈতিক দায়িত্ববোধের প্রতিফলন। আপনার আয় না থাকলেও রিটার্ন জমা দিন, নিয়মিত থাকুন এবং ভবিষ্যতের পথ সুগম করুন।
Leave a Reply