রিটার্ন না দিলে সম্পদ ও আয়-ব্যয়ের তথ্য সরেজমিন তদন্ত করা হবে : এনবিআর
Update Time :
Monday, September 29, 2025
91 Time View
“আয়, ব্যয় ও সম্পদের তথ্য সরেজমিন তদন্ত” সংক্রান্ত জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR), আইন ও কার্যপ্রণালীর বর্তমান তথ্য, নির্দেশনা ও প্রেক্ষাপট আলোচনা করা হলো:
“আয়, ব্যয় ও সম্পদের তথ্য সরেজমিন তদন্ত” বলতে বোঝায় করদাতা/টিন ধারকের যে আয়, ব্যয় ও সম্পদ রয়েছে, তা তাদের দাখিল করা রিটার্নের তথ্যের সঙ্গে মিল আছে কি নেই; যদি মিল না থাকে, তাহলে আইন অনুযায়ী তদন্ত ও কর আরোপ করা। NBR এ সম্প্রতি এ বিষয়ে বেশ কিছু নির্দেশ ও নীতি এসেছে:
নির্ভুল আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে NBR তালিকাভুক্ত
কর আইনজীবীর পরামর্শ নিন। মানিক দাস, কর আইনজীবী
যদি কোনো টিন ধারক আয়কর রিটার্ন দাখিল না করে, তাহলে সেই করদাতার আয়, ব্যয়ওসম্পদেরতথ্যসরেজমিনতদন্ত করে আইন অনুযায়ী কর আরোপ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, যারা রিটার্ন দাখিল করছেন, তাদের আয়, ব্যয় ও সম্পদের তথ্য সত্য ও যথাযথ হওয়া উচিত; ‘জিরো রিটার্ন’ দেওয়া যাবে না যদি প্রকৃত আয়, ব্যয় বা সম্পদ থাকে। নন‑ফাইলারদের (যারা রিটার্ন দাখিল করেন না) বিরুদ্ধে গোয়েন্দা কার্যক্রম বাড়ানো হবে এবং স্থানীয় কমিশনারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আইনওবিধান:
নিচে সংশ্লিষ্ট আইনি বিধানগুলি ও কার্যপ্রণালী রূপরেখা দেওয়া হলো:
বিষয়
প্রাসঙ্গিকআইনবাবিধান
উল্লেখযোগ্যধারাগুলিওকাজেরপ্রক্রিয়া
আয়‑ব্যয়‑সম্পদের তথ্য সঠিকভাবে দাখিল
Income Tax Act, ২০২৩
করদাতাকে তাদের আসল আয়‑ব্যয়, সম্পদ ও দায়‑দেনার (liabilities) তথ্য দাখিল করতে হবে। ‘জিরো’ সব ক্ষেত্রেই ‘জিরো’ দেওয়া যাবে না যদি বাস্তবে আয়/ব্যয়/সম্পদ থাকে।
‘Zero return’‑এর আইনগত দণ্ডবিধি
Income Tax Act, ২০২৩ ধারা ৩১২ ও ৩১৩
ভুল বা নেতিবাচক তথ্য দাখিল করলে, তারা শাস্তিযোগ্য অপরাধে পড়বেন; সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।
নন‑ফাইলারদের জন্য নির্দেশনা
NBR কর্তৃক আংশিক নীতি / সাংবাদিক বিজ্ঞপ্তি
কমিশনারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যারা রিটার্ন দাখিল করছেন না, তাদের বিরুদ্ধে রিটার্ন দাখিলের আদেশ জারি করতে, তাদের আয়‑ব্যয়‑সম্পদ সরেজমিন তদন্ত করতে এবং আইন অনুযায়ী কর আরোপ করতে।
তদন্ত ও গোয়েন্দা কার্যক্রম
Income Tax Intelligence & Investigation Unit (এনবিআরের গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট) ও ACC‑এর সহযোগিতা
আয়কর ফাঁকি, সম্পদ লুকিয়ে রাখার অভিযোগ, অবৈধ আয়বাহী সম্পদ ইত্যাদি বিষয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে; এনবিআরের টিনহোল্ডার, নন‑ফাইলারদের কাজ তৎপর করা হবে।
বাস্তবপ্রক্রিয়া:
নিচে কীভাবে এই ‘সরেজমিন তদন্ত’ সাধারণভাবে হয়, ধাপগুলো দেওয়া হলো:
নন‑ফাইলারবাসন্দেহযুক্তকরদাতাশনাক্ত: রিটার্ন দাখিল না করা, ‘জিরো রিটার্ন’ দেওয়া, আয়‑ব্যয়‑সম্পদ মেলান না এমন টিন হোল্ডারদের শনাক্ত করা হয় তথ্য ভিত্তিক বিশ্লেষণ ও গোয়েন্দা ইউনিটের ডেটা থেকে।
নোটিসপাঠানো: শনাক্ত ব্যক্তিদের নোটিস দেওয়া হয় রিটার্ন দাখিল করতে; পাশাপাশি আয়, ব্যয় ও সম্পদের বিস্তারিত তথ্য দাখিল করার আহ্বান জানানো হয়।
সরেজমিনতদন্ত (Field‑investigation / On‑site verification): যদি রিটার্ন দাখিল করা না হয় বা দাখিল করা তথ্য সন্দেহভাজন হয়, কর কমিশনার বা সংশ্লিষ্ট অফিসারদের অধীনে সরেজমিন তদন্ত করা হয়। এ সময় আয়‑ব্যয়, ব্যাঙ্ক লেনদেন, সম্পদের ক্রয়‑বিক্রয়, প্রদর্শিতা (asset holding) ইত্যাদির মিল আছে কি না দেখা হবে।
বিজ্ঞানভিত্তিকবিশ্লেষণওরিস্কএনালাইসিস: তথ্য প্রযুক্তি ও বৈশ্লেষণ ব্যবহার করে করদাতার আর্থিক জীবনধারা (lifestyle), ব্যয় ও আয় মিল আছে কি না, অস্বাভাবিক ব্যয় বা সম্পদ বৃদ্ধির উৎস কি মতিয়েছে তা পরীক্ষা করা হয়।
রিপোর্টওকরআরোপ: তদন্ত শেষ হলে অফিসার একটি রিপোর্ট তৈরি করবে যেখানে নিশ্চিত করা হবে যে সম্পদ ও দায়‑দেনা তাদের আয়বহির্ভূত নয়। যদি মিল পাওয়া যায়, তাহলে সংশোধিত রিটার্ন তোলা হবে বা কর আরোপ করা হবে আইনানুযায়ী।
জরিমানাওশাস্তি: ভুল তথ্য, অধরা আয় বা সম্পদ থাকলে কর পুনর্মূল্যায়ন ও কর ঋণসহ জরিমানা, সম্ভাব্য শাস্তি (আইন অনুযায়ী কারাদণ্ড) হতে পারে।
সম্প্রতিঘোষিততথ্য / উদাহরণ:
২০২৫‑২৬ অর্থবছরের জুলাই মাসের রাজস্ব আহরণ পর্যালোচনায় NBR চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান নির্দেশ দিয়েছেন যে, যাদের ই‑টিআইএন আছে কিন্তু রিটার্ন দাখিল করেন না, তাদের সবকেই সরেজমিন তদন্তের আওতায় আনতে হবে। টিন হোল্ডারদের মাঝে যারা রিটার্ন দাখিল করছেন না, তাদের আয়‑ব্যয়‑সম্পদের যাচাই করার কথা বলা হয়েছে।
ACC‑এর পক্ষ থেকে NBR‑এর ১৭ জন কর্মকর্তাকে তাদের সম্পদের তথ্য ও দায়‑দেনা হিসেবে উন্মুক্ত করতে বলা হয়েছে, কারণ দেখা গেছে তাদের অধীনে অবৈধ/অজানা উৎস থেকে কিছু সম্পদ থাকতে পারে।
চ্যালেঞ্জওবিবেচ্যবিষয়:
তথ্যসংগ্রহওপ্রসেসিং‑দক্ষতা: অনেক ক্ষেত্রে ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট, সম্পদ ক্রয়‑বিক্রয় রেকর্ড, পেমেন্ট রিসিট‑ইত্যাদির যাচাই কঠিন হয় বা সেসব উপাত্ত পাওয়া যায় না।
আইনগতজটিলতাওআপিল‑প্রকৃতি: করদাতা প্রমাণ দিতে পারবেন যে সম্পদের উৎস বৈধ ছিল; কখনো কখনো আদালত বা ট্রাইব্যুনালে আপিল হয়।
গোপনসম্পদবাঅবৈধআয়লুকিয়েরাখারপ্রচেষ্টা: টাকা কেবল নাম‑ঠিকানা পরিবর্তন করে, আড়ালে রাখতে পারে।
আদায়ওপ্রশাসনিকখরচ: সিরিয়াস তদন্ত বেশ সময় এবং সংস্থান নেয়; প্রশাসনিক খরচ ও পার্থক্য থাকতে পারে।
Leave a Reply